স্টাফ রিপোর্টার ::
নদী খনন ও হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় বিভিন্ন দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে সুনামগঞ্জের সচেতন নাগরিকের সংগঠন ‘জনউদ্যোগ’।
রবিবার বেলা ১১টায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে ৭টি জেলার হাওরের উপর নির্ভরশীল সর্বস্তরের জনগণের জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন বোরো ফসল উৎপাদন। প্রতি বছর বোরো ফসল কৃষকরা ঘরে উঠাতে পারবে তার কোনো নিশ্চয়তা থাকেনা। মেঘালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এবং বরাক অঞ্চলের পাহাড়ি ঢলে অকাল বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে কোনো সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে ফসল রক্ষা বাঁধ দেওয়া হতো না। তখন ইউনিয়ন পরিষদ বা থানা পরিষদের সাহায্যে ফসল রক্ষার ব্যবস্থা করা হতো। এই এলাকার জনগণ ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের আমল থেকে নদী খনন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দাবি করে আসছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঠিকাদারি প্রথায় ফসল রক্ষা কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিকট। ঠিকাদাররা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে সামান্য কাজ দেখিয়ে বিল উত্তোলন করে নিতো। এলাকার মানুষ প্রকৃতির উপর দোষারূপ করে দুর্ভোগে দিনযাপন করতো। ২০১৭ সালে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের দাবির মুখে ঠিকাদারি প্রথা বাতিল করে পিআইসি প্রথা চালু হয়। কিন্তু পিআইসি পদ্ধতির নীতিমালা অনুযায়ী যথাযথ নিয়ম-কানুন পালন না করায় বাঁধের কাজ অনিয়মের কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হচ্ছে। পিআইসি কাজের কোনো নির্দেশনাই মানা হচ্ছে না। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নীতিমালায় আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই। আবার কিছু কিছু বিষয় নীতিমালাতেও নেই।
এজন্য প্রতিবছর বাঁধ নির্মাণের প্রাক্কলন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা, গণশুনানীর মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করে পিআইসি গঠন, গুরুত্বপূর্ণ ক্লোজারের কজওয়ে নির্মাণ করা সব স্লুইস গেট সংস্কার, স্থানীয় কৃষক কর্তৃক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দেওয়া, বিগত মৌসুমে যে সকল পিআইসিতে গাফিলতি ও অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে তাদেরকে নতুন করে পিআইসিতে অন্তর্ভুক্তি না করা, পিআইসি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত পিআইসি কর্মীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা, নভেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে পিআইসি গঠন, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু এবং ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করার দাবি জানানো হয়।
এছাড়াও বর্তমানে যে সব কারণে ফসল রক্ষায় বাঁধা সৃষ্টি করছে তা হলো, সুরমা থেকে মেঘনা নদী পর্যন্ত পলি ভরাট হয়ে যাওয়ায় অল্প বৃষ্টি বা পাহাড়ি ঢল এসে সরাসরি হাওরের বাঁধে আঘাত করে এবং কৃষকের ফসল তলিয়ে যায়। যথেষ্ট পানি নিষ্কাশনের সুযোগ না থাকায় এ সমস্যা আরও তীব্র হচ্ছে।
এবছর মাটির অভাবে অনেক বাঁধের কাজ করা কষ্ট হয়েছে। ভবিষ্যতে এই সংকট প্রকট হয়ে বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। বিলগুলো ও হাওরের নালা/ দাইড় ভরাট হয়ে যাওয়ায় হাওরগুলো সমতলের আকার ধারণ করেছে ও পানি ধারণ ক্ষমতা হারাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় মাছের প্রজনন স্থান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে যার ফলে মাছের উৎপাদনও কমে গেছে। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন সেগুলো হলো, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও আগাম পাহাড়ি ঢল থেকে রক্ষার জন্য নদী খনন, বিজ্ঞানভিত্তিক-সাধারণ মানুষের বোধগম্য পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন নিশ্চিত করা। হাওরের নালা/ দাইড়/ বিল খননের ব্যবস্থা নিয়ে প্রাপ্ত মাটি দ্বারা বেড়ি বাঁধ নির্মাণ, সেচের পানি সংরক্ষণ ও মাছের প্রজননের আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করা, বিলগুলোতে অবৈধ জাল বা যন্ত্র ব্যবহার করে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা, পোনা মাছ নিধন বা মা মাছ রক্ষার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা, হাওরের জীববৈচিত্র্য ও প্রতিবেশ/ বাস্তুসংস্থান সংরক্ষণের জন্য সকল প্রকার জলাবন সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা, হাওরের সকল জলাবন চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত এলাকা/ বিশেষ জীববৈচিত্র্য এলাকা অথবা প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা, মাছ ধরা ও লালন পালনের ক্ষেত্রে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের শতভাগ সুযোগ সৃষ্টি করা, জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৯ সহ হাওরে যে সকল আইন প্রযোজ্য সকল আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ জনউদ্যোগের আহ্বায়ক রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু, সদস্য সুখেন্দু সেন, অ্যাড. খলিল রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, পাঞ্চালি চৌধুরী, জেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর হক মিলন, উন্নয়নকর্মী শাহ কামাল, গণমাধ্যমকর্মী কুলেন্দু শেখর দাস। সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সদস্য সচিব সাইদুর রহমান আসাদ।
শেষে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার কাছে স্মারকলিপি পৌঁছে দেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জনউদ্যোগের সদস্য অ্যাড. মতিয়া বেগম, অ্যাড. মাহাবুবুল হাছান শাহীন। এসময় জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে হাওরের বিভিন্ন সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
জনউদ্যোগের সংবাদ সম্মেলন ও স্মারকলিপি, নদী খনন ও ফসল রক্ষার দাবি
- আপলোড সময় : ২৮-০৪-২০২৫ ০৪:৩৫:২১ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৮-০৪-২০২৫ ০৪:৪৫:৩৬ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ